পোড়া বাড়ি - দ্বিতীয় অধ্যায়

Horror
5 out of 5 (1 )

দ্বিতীয় অধ্যায় :- কক্ষ নং-০৫ (দ্বিতীয় খন্ড)

বৃদ্ধলোক’টি পেছনে ফিরে তাঁদের হ্যাঁ না কিছুই বললেন না! শুধু বললেন- এখন তোমাদের যাওয়ার সময়!

এই বলে বৃদ্ধলোক’টি তাঁর কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। আর পেছন থেকে ফারাবী ও সায়েদ তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো। এর মধ্যেই তানভীর তাদের মাঝে দৌড়ে চলে আসেন আর বলেন- বন্ধু? আমাদের কক্ষে একটি মেয়ে কথা বলছে!

তানভীরে’র কথা শুনে, ফারাবী বলেন- তুমি তাঁকে বিয়ে করে ফেলছো না কেন?
ফারাবী’র এমন কথায় তানভীর কিছুটা রেগে গেলেন, এবং জোর গলায় বললেন- আমি তোমাদের সাথে মজা করছি না। আর তোমরা আমার কথা শুনতে চাইছো না কেন?

ফারাবী বলেন- আচ্ছা, ঠিক আছে। আমরা তোমার সব কথা শুনবো, তবে এখন না! আগে কাচ্চি খাবো, তারপর বিপ্লব উদ্যানে বসে তোমার সব কথা শুনবো।

এই কথা বলে ফারাবী বাড়ি’টি থেকে বেড়িয়ে রাস্তার দিকে হাঁটা দিলো। আর তখন তানভীর সায়েদ’কে জিজ্ঞেস করলো- আচ্ছা সায়েদ, এখানে কাচ্চি খাওয়ার কথা কেন আসলো?

জবাবে সায়েদ বলেন- আমরা কক্ষে’র ওই রুমটি ভাড়া নিয়ে ফেলেছি। আর মজার বিষয় কি জানো? ভাড়া মাত্র ৩,০০০/- টাকা আর কোনো অগ্রিম টাকাও দিতে হবে না। তাই এই খুশিতে হয়তো ফারাবী কাচ্চি খাওয়ার প্ল্যান করেছে!

তানভীর বেশ অবাক হয়ে বলেন- কক্ষে’র ওই রুম’টি ভাড়া নিয়েছো? কিন্তু তোমরা বৃদ্ধলোক’টিকে পেলে কোথায়?

সায়েদ বলেন- উনি নিচ তলায় গেইটে’র সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো।
তানভীর বলেন- কিন্তু উনি তো কক্ষে’র দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো?
সায়েদ বলেন- হ্যাঁ ছিলো। তবে উনার গরম লাগছিলো, তাই উনি নিচে চলে এসেছে। আর দয়া করে, কোনো কথা না বলে চলো এখন...

এই বলে সায়েদও ফারাবী’কে অনুসরণ করে হাঁটা দেয়। এবং তানভীর মনে মনে ভাবতে লাগলেন- এই অদ্ভুত লোকের অদ্ভুত কথা-বার্তাগুলো এরা কিভাবে মেনে নিচ্ছে? এরা কি পাগল হয়ে গেছে? যাই হোক, বিপ্লব উদ্যানে বসে আমাকে এদের সবকিছু খুলে বলতে হবে।

এইসব ভাবতে ভাবতে তানভীরও তাদের পিছু পিছু হাঁটা শুরু করে।
কিছুটা সময় হাঁটার পর তিন বন্ধু বাড়িটি’র রাস্তা ত্যাগ করে। আর বড় আশ্চর্যের বিষয় হলো, সেই বাড়ি’র ছাদের দেয়ালে’র উপর বসে ওই কাকটি তা দেখতে থাকতে!

অবশেষে,
তিন বন্ধু আনন্দ নগর গলি থেকে বেড়িয়ে একটি রিকশা’র খোঁজ করতে শুরু করে। কিছু সময় পর তাঁরা একটি রিকশা পেয়ে গেলে, ফারাবী রিকশাওয়ালা মামা’কে জিজ্ঞেস করে- এই মামা, ০২নং গেইট যাবেন?

রিকশাওয়ালা মামা তাঁকে হ্যাঁ সম্মতি দিলে, তাঁরা রিকশায় চড়ে বসে। এবং বসার স্থানটি দুইজনে’র হওয়ায় তাঁরা একটু চাপাচাপি করেই বসে। তিন বন্ধু রিকশায় চড়ে গন্তব্যের দিকে রওনা দিতেই, বাতাসে’র সাথে ভেসে আসলো মাগরিবে’র আযান। আযানে’র শব্দে এতো ব্যস্ত শহর নিমিষেই কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে গেলো! এবং পরিবেশ’টা এমন ঠান্ডা থাকায়, রিকশায় চড়তে তাঁরা খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

এইভাবে কিছু সময় পার করার পর, তাঁরা গন্তব্যে এসে পৌঁছালো। গন্তব্যে এসে রিকশাওয়ালা মামা’কে তাঁর ভাড়া পরিশোধ করে, একটি কাচ্চির দোকানে ঢুকে তাঁরা কাচ্চি খেতে বসে পড়ে। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে তিন বন্ধু নিয়ম মতোই বিপ্লব উদ্যানে গিয়ে বসে।

এবং ফারাবী তানভীর’কে জিজ্ঞেস করে- এইবার বলো, তোমার সমস্যা’টা কি?

জবাবে তানভীর বলেন- তোমরা দু’জন যখন নিচে চলে আসো, তখন আমি ওই রুমে পিছন থেকে একটি মেয়ে’র কন্ঠ পাই! মেয়েটি আমায় বলছিলো, সে আমার কথা বিশ্বাস করে! কিন্তু আমি যখন পিছনে ফিরে তাঁকাই, তখন আমি সেখানে আর কাউকেই দেখতে পাই না! আর সাথে সাথেই আমি দৌড়ে নিচে নেমে যাই।

তানভীরে’র এমন কথা শুনে, ফারাবী বলেন- তানভীর, তুমি হয়তো ভুল শুনেছো?

তানভীর বলেন- প্রশ্নই আসে না! আমি কিভাবে এতোটা ভুল শুনবো?
ফারাবী বলেন- দেখো তানভীর? ওই রুমটা’য় আমরা ছাড়া আর কেউই ছিলো না! তাহলে তুমি কিভাবে সেখানে একটি মেয়ে’র কন্ঠ শুনেছো? তাই আমার মনে হয়, অবশ্যই তুমি ভুল শুনেছো?
তানভীর বলেন- আমি ভুল শুনি নি! তোমরা আমার কথা কেন বিশ্বাস করতে পারছো না?

এই বলে তানভীর দীর্ঘ-শ্বাস ফেললেন। এবং কি যেন ভেবে, আবারো বলে উঠলেন- আচ্ছা, আর ওই বৃদ্ধলোক’টি? তাঁর কথা-বার্তাগুলো কি তোমাদের অদ্ভুত মনে হয় না? প্রথমে তিনি বলেন তিনি একা তাঁর কেউই নেই, আবার বলেন আমাদের দেখে নাকি তাঁর মেয়ে’র কথা মনে পড়ে গেছে! আর তিনি ওই কক্ষে’ই বা কেন প্রবেশ করলেন না? আর কক্ষে’র সামনে তিনি গরম আবহাওয়া কোথায় পেলেন? এইসব কিছু ‍কি অদ্ভুত নয়?

তানভীর আরো উত্তেজিত হয়ে বলেন- তোমরা আরেক’টা জিনিস লক্ষ্য করেছো? প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় দু’টি করে কক্ষ, কিন্তু তৃতীয় তলায় মাত্র একটি কক্ষ! এগুলো কি সন্দেহ করার মতো বিষয় নয়?

ফারাবী তানভীরে’র কথা শুনে বলেন- তানভীর? আমি মানছি বৃদ্ধলোক’টির কথা-বার্তাগুলো অদ্ভুত ধরনের, আর তৃতীয় তলায় একটি কক্ষ সেটাও ঠিক! কিন্তু এইসব কিছুর মধ্যে তুমি কি সন্দেহ করছো?

তানভীর জবাবে বলেন- আমার সন্দেহ, তিনি কোনো সাধারণ মানুষ নন!

তানভীরে’র কথা শুনে এইবার ফারাবী বেশ অবাক হন। এবং কিছুটা নীরব কন্ঠে বলে উঠেন- তারমানে তুমি বলতে চাইছো! আমরা যে বৃদ্ধলোক’টির সাথে কথা বলেছি, তিনি কোনো সাধারণ মানুষ না! ভূত বা অদৃশ্য কিছু?

তানভীর বলেন- হ্যাঁ, ঠিক তাই! আর ওই বাড়িটা কোনো সাধারণ বাড়ি না, ওইটা ভূতুড়ে বাড়ি।

তানভীর ও ফারাবী’র এমন কথা-বার্তা শুনে সায়েদ খুবই রাগান্বিত হয়ে গেলেন। এবং তাদের দু’জনকে উদ্দেশ্য করে বললেন- দয়া করে, তোমরা এসব ফালতু কথা-বার্তা বন্ধ করো। তোমরা কি পাগল হয়ে গেছো? একটা জলজ্যান্ত মানুষ’কে তোমরা ভূত বানিয়ে দিচ্ছো!
আর তানভীর, তোমার যখন এতোই সন্দেহ হচ্ছে তবে তুমি প্রমাণ করে দেখাচ্ছো না কেন?

সায়েদে’র এমন রাগান্বিত আচরণ দেখে, ফারাবী তাঁকে সান্ত্বনা দেয় এবং বলেন- সায়েদ, তুমি ঠিকই বলেছো।

অপরদিকে তানভীর বলেন- তারমানে কি আমার কথা তোমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না?

ফারাবী জবাবে বলেন- তানভীর? আমরা অবশ্যই তোমার কথা বিশ্বাস করতে বাধ্য। কিন্তু এমনও তো হতে পারে, তুমি যা কিছুই বলছো তার সবই ভ্রম! তাই আমারও মনে হয় তোমার প্রমাণ করা উচিত! আর যদি সত্যিই এমন কিছু হয়ে থাকে, তবে আমরা পরবর্তী মাসেই বাড়ি’টি পরিবর্তন করে ফেলবো।

তানভীর বলেন- ঠিক আছে। তবে মনে রেখো, হয়তো সেই সুযোগ আসার আগেই আমাদের কোনো বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে!
বিপরীতে ফারাবী বলেন- আমাদের বন্ধুত্ব যদি অটুট থাকে, তবে কোনো কিছুই আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।

ফারাবী আরো বলেন- অশুভ কোনো কিছুই আমাদের বন্ধুত্বের চেয়ে শক্তিশালী হতে পারে না।

ফারাবী’র কথা শুনে তানভীর খুবই অনুতপ্ত হলেন এবং বললেন-
তানভীর :- আমায় ক্ষমা করে দিয়ো! আসলে তুমি ঠিকই বলেছো, বন্ধুত্বের চেয়ে বড় আর কিছুই নেই।

তানভীর নিজের ভুল বুঝতে পারায়, সায়েদ তাঁর কাঁধে হাত রাখলেন এবং বললেন-
সায়েদ :- দুঃখ পেয়ো না বন্ধু, ছোট-খাটো ভুল না হলে বন্ধুত্বের মজা কি বলো?

অপরদিকে ফারাবী বলেন- আমি ক্ষমা করতে পারি, তবে একটা শর্ত আছে?

তানভীর কি শর্ত জানতে চাইলে? ফারাবী তাঁকে বলেন-
ফারাবী :- আমাকে একটা গোল্ডলিফ খাওয়াতে হবে?

এই কথা শুনে তানভীর ও সায়েদ হেসে উঠলেন। এবং তানভীর খাওয়াবে বলে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন।

এইভাবে তিন বন্ধু আরো কিছুসময় হাসি-ঠাট্টা’র মধ্যে কাঁটায়। এবং একটা সময় ফারাবী বলে উঠেন- চলো, এখন উঠা যাক। বাসায় হয়তো সবাই চিন্তা করছে!

তানভীর ও সায়েদ তাঁর কথায় সহমত জানালে, ফারাবী শর্তমতো তানভীরে’র কাছ থেকে গোল্ডলিফ সিগারেট চায়? এবং তানভীর একটি টং দোকান থেকে গোল্ডলিফ সিগারেট কিনে ফারাবী’কে দেয়। সিগারেট হাতে পেয়ে ফারাবী খুশি মনেই তাঁদের থেকে বিদায় নেয়। এবং লেগুনা গাড়ী’র জন্য বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। অপরদিকে তানভীর ও সায়েদ বাসা’র উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দেয়।

বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর, কোনো লেগুনা না পেয়ে ফারাবী বেশ চিন্তায় পড়েন! এবং মনে মনে বলেন- কি ব্যাপার? আজকে কোনো গাড়ি নেই! কয়টা বাজে?

সময়ে’র কথা ভেবে মোবাইল ফোন বের করে সময়ে’র দিকে তাঁকাতেই দেখেন, মাত্র ০৯টা বাজে।
ফারাবী এবার আরো চিন্তায় পড়েন এবং ভাবেন- এই সময়ে তো এখানে গাড়ি’র অভাব পড়ে না! তবে আজ কি হলো?

এইসব ভাবতে ভাবতে ফারাবী আরো কিছু সময় সেখানে ব্যয় করেন। এবং একটা পর্যায়ে তিনি গাড়ি’র আশা ছেড়ে দিয়ে, তানভীরে’র দেওয়া সিগারেট’টা জ্বালিয়ে বাসার দিকে হাঁটা দেন। হাঁটতে হাঁটতে বেশ কিছুটা সামনে এলে ফারাবী দেখতে পান, দূর থেকে একটি পাগল লোক তাঁর দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে! লোক’টি দেখতে ছিলো বেশ খাটো, হাতে লম্বা একটি বাদামী রংয়ের লাঠি, চুলগুলো বেশ লম্বা ও জটে ভরপুর, পরনে শুধু একটি লুঙ্গি ছাড়া আর কিছুই ছিলো না।

পাগল লোক’টির এমন পলকহীন চাওনি দেখে ফারাবী বেশ ভয়ে যান। মুলত তিনি আগে থেকেই পাগল লোকদের খুব ভয় পেতেন। আর এখন এই পাগল লোক’টি যেভাবে তাঁর দিকে তাঁকিয়ে আছে, এতে ফারাবী’র ভয় আরো দ্বিগুন মাত্রায় বাড়ছে।

ফারাবী এবার হাঁটার গতি আরো বাড়িয়ে দিলেন। এবং ভাবতে লাগলেন এই পাগল লোক যদি তাঁকে হুট করে মেরে বসে, তখন তিনি কি করবেন?

এইসব ভাবতে ভাবতে ফারাবী পাগলে’র বেশ কাছাকাছি চলে আসে। এবং কোনো রকমে তাঁকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে, পাগল লোকটি তাঁকে ডাক দেয়। আর উচ্চস্বরে বলেন-

পাগল :- এই বেটা? দাঁড়া, দাঁড়া বলছি?

পাগল লোক’টির ধমক খেয়ে ফারাবী ভয়ে হাতে থাকা সিগারেট’টি ফেলে দাঁড়িয়ে যান। এবং কাঁপতে কাঁপতে বলেন-
ফারাবী :- জ্বি, বলুন!
পাগল :- খুব ক্ষুধা লাগছে আমার! কিছু খাবার দিবি?

ফারাবী কাঁপতে কাঁপতে বলেন-
ফারাবী :- ঠিক আছে। আপনি দাঁড়ান, আমি খাবার নিয়ে আসছি।

এই বলে ফারাবী খাবারে’র সন্ধানে আশেপাশে তাঁকালে, তাঁর দৃষ্টিতে কোনো খাবারে’র দোকান ধরা দিলো না! অবশেষে রাস্তার অপরপার্শ্বে ফারাবী একটি টং দোকান দেখতে পায়। আর সেই দোকান থেকে কলা ও বন এনে পাগলে’র হাতে দেয়।

পাগল লোক’টি কলা ও বন হাতে পেয়ে খুব খুশি হয়। এবং খাওয়ার উদ্দেশ্যে মুখে দিলে, বড় আশ্চর্যের সাথে এক কামড় খেয়ে বাকিটা ছুঁড়ে ফেলে দেন।

পাগল লোক’টির এই কান্ড দেখে, ফারাবী খুব ভয় পেয়ে যান। আর ভীত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন- কিছু হয়েছে? খাবার’টা ফেলে দিলেন যে?

ফারাবী’র মুখে এমন প্রশ্ন শুনে, পাগল লোক’টি তাঁর দিকে গরম চোখে তাঁকালেন। এবং বললেন- অদৃশ্য প্র্রেম! অদৃশ্য প্রেম! সে আসবে! সে আসবে! খুব শীগ্রই...


অধ্যায়-০৩ (অদৃশ্য প্রেম)

तुम्हाला आवडतील अशा कथा

X
Please Wait ...